ময়মনসিংহ এর দূর্গাপুরে একদিন

ময়মনসিংহ থাকি বিধায় বন্ধুমহলের অনেকেই অনেকদিন ধরেই দূর্গাপুরে যাওয়ার কথা বলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কারো সাথেই যাওয়া হচ্ছিলো না। হঠাৎ জনাব বললেন, সবাইকে যে নেয়ার কথা বলছো আমরাই তো এখনো চিনি না জায়গাটা। চলো দুজনে যেয়ে আসি তারপর সবাইকে নিয়ে যাবো। আমি তো সাথে সাথে রাজি। এ সুযোগ মিস করা যায় নাকি। 

তো গত শুক্রবারে রওনা হয়ে গেলাম চীনামাটির দেশে। সবার কাছে শুনেছি রাস্তা অনেক খারাপ তাই মানসিক ভাবে প্রস্তুতি ছিল ঝাঁকুনি খেতে খেতে যাওয়ার কিন্তু পুরো রাস্তাটা একদম স্মুদ । রাস্তার দুপাশে সদ্য কাটা ধানক্ষেতে কুয়াশার মায়াময় চাদর। হু হু করে ধেয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস আর সদ্য জেগে ওঠা সূর্যের মিষ্টি আলোর মিশেলে অসাধারণ যাত্রাপথ৷ পথে দেখা মিলল কংস নদের। সিএনজিচালক যখন বলল এই নদের মাছ অনেক টেস্টি আমার মন চাচ্ছিল তখনি মাছ কিনে ফেলি


অবশেষে ৯টায় পৌছলাম দূর্গাপুরে। সিএনজি থেকে নেমে তেরিবাজার ঘাটে যাওয়ার জন্য অটোতে উঠলাম। কিন্তু যাত্রায় একটা বাধা না আসলে কি আর চলে! তাই মাঝপথে অটো নষ্ট হয়ে গেল। তাই হাটা ধরলাম। রাস্তার শেষে ভাবছেন নদী শুরু নাহ ভাই। এরপর বালুর সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে। তো দিলাম পাড়ি। বালুর পর সোমেশ্বরী নদী। সেখানে চলছে বালু, পাথর উত্তলনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। নৌকা ঘাটে আসা পর্যন্ত সেটাই দেখলাম। ওপারের জায়গাটার নাম শিবগঞ্জ। সেখানে গিয়ে নাস্তা করে অটো রিজার্ভ নিলাম ৫৫০ টাকায়। সমিতি থেকে নির্ধারিত করা আছে ৭০০ টাকা তাও বাঙালী বলে কথা একটু বারগেইন না করলে কি আর চলে। 

এই পথটাও বেশ সুন্দর। দূরে পাহাড়ের সারি। সবুজ প্রকৃতি আর নীল আকাশের মিতালি। প্রথমে গেলাম বিজিবি ক্যাম্প। ক্যাম্পের ভেতর ঢোকার অনুমতি নেই। তবে এর সাথেই সোমেশ্বরীর একটা সুন্দর ঘাট৷ নদীর পানি অনেক স্বচ্ছ। সেখানে নৌকা রিজার্ভ বা জনপ্রতি হিসেবে ঘোরা যায়। আমি অবশ্য পানিতে পা ভিজিয়ে হেটেই খুশি হলাম। নৌকায় আর ঘুরলাম না ভেবেছি সব জায়গা কাভার করতে পারবো না তাই।

ক্যাম্পের কাছে বেশ কিছু দোকান আছে। এগুলোতে ভারতীয় পণ্য সুলভ দামে পাওয়া যায়। তাই বেশ কিছু চকলেট আর বিস্কিট কিনে ফেললাম। খাবার ছাড়া ভ্রমণ চলে নাকি!  
এরপর গেলাম কমলা বাগান দেখতে। যেয়ে বেশ হতাশ হলাম। কমলা গাছ গুলো অনেক দূরে। ওখানে যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। দূর থেকে একটু উকি দিয়ে দেখা আর কি। 
তাই এখানে সময় নষ্ট না করে চলে গেলাম রানী খং চার্চে। সেখানে গিয়ে দেখি গেটে তালা দেয়া। শুক্রবারে অনেক পর্যটক আসে। আর আমরা বাঙালিরা তো কোথাও গিয়ে সেই জায়গার সন্মান রাখতে পারি না। তাই তাদের প্রাত্যহিক জীবনে সমস্যা হয়। এজন্য তালার ব্যবস্থা । 

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একজন গ্রাম পুলিশের সহায়তায় গেট খোলার ব্যবস্থা হলো। সেখানে ঘুরে ফিরে ভালোই লাগলো। তবে বসবাসকারীরা কথা বলতে একদমই আগ্রহী না। এটার কারণ এই আমরাই৷ অন্য উপাসনালয়গুলোকে শ্রদ্ধা দেখাতে পারিনা। জুতো খুলে যাওয়ার কথা লিখা থাকা সত্ত্বেও জুতোসহ অনেকে চার্চের বারান্দায় হাটছে৷ বাগানের ফুল পাতা ছিড়ছে।

এরপর গন্তব্য চীনামাটির পাহাড়। যদিও পাহাড় বলা যায়না এখন আর। টিলামতো একটা জায়গা৷ অসাধারণ সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষায় আছে যেন কতশত বছর ধরে। এখানে আশরাফুল নামের বাচ্চা একটা ছেলে এলো গাইড হতে। যদিও গাইড প্রয়োজন নেই তাও ওকে সাথে নিলাম আমরা। তার গাইডেন্সে গেলাম তার ভাষায় "গুলাফি মাডি" 
 দেখতে। আমি মনে মনে ভাবছিলাম এক খাবলা "গুলাফি মাডি" নিয়ে আসবো। কিন্তু এগুলো মাটি না ভাই পাথর। শিলা টাইপের মাটি। তাই আর "গুলাফি মাডি" আনা হলো না। আফসোস। 

গুলাফি মাডির সাথে বেশ একটা ফটোসেশন শেষ করে গেলাম নীল পানি দেখতে। আহা সেখানেই আসল সারপ্রাইজ। আপনি তাকাতেই সেটা সবুজ পানি (মিন্ট গ্রিন শেড) হয়ে যাবে। কিন্তু প্রকৃতির এত সুন্দর আয়োজন দেখে পানি নীল না সবুজ তা ভুলে শুধু বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতে হয়। এক মুহুর্তে পুরো ভ্রমণ টা সার্থক হয়ে ওঠে। ঘন্টার পর ঘন্টা এর দিকে তাকিয়ে থাকা যায়। হুশ ফিরে আসে অপরিচিত এক পর্যটকের ফোনালাপে। " ভাই বেড়াইতে আইছিলাম। এখন একটা গর্তভরা সবুজ পানির সামনে বইসা আছি।"

আমরাও অনেকটা সময় বসে থেকে এই গর্তভরা সবুজ পানির মায়ায় মোহিত হয়ে ফেরার পথ ধরলাম।
যাতায়াত খরচঃ
শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ থেকে সিএনজি জনপ্রতি ১৬০ টাকা
দূর্গাপুর স্ট্যান্ড থেকে তেরি বাজার ঘাট পর্যন্ত অটো জনপ্রতি ৫ টাকা
নৌকা পারাপার জনপ্রতি ৫ টাকা
শিবগঞ্জ বাজার থেকে অটো রিজার্ভ চার্ট অনুযায়ী ৭০০ টাকা বারগেইনের পর ৫৫০ টাকা
যারা ঢাকা থেকে আসতে চান এনা বাসে ময়মনসিংহ এসে অটো বা রিকশা নিয়ে শম্ভুগঞ্জ ব্রিজে গিয়ে একই রুটে যেতে পারেন।
খাবারঃ
খাবারের তেমন ভালো স্থান নেই বললেই চলে। তবে ভ্রমণে এটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি না। হোটেল নিরালায় নিয়ে গিয়েছিল অটো ড্রাইভার। এছাড়া রিফ্রেশমেন্ট হিসেবে ডাব কমলা এগুলো পাওয়া যায় বিভিন্ন জায়গায়।
Collection: Aeymun Bashar
Previous
Next Post »

Popular Posts