সাগরের গর্জন শুনতে ঘুরে আসুন মহেশখালীর সোনাদিয়া , চট্টগ্রাম

সাগরের মাঝে ৯ বর্গ কিলোমিটারের এক স্বর্গীয় দ্বীপ । কী যেন এক অজানা মায়ার হাতছানি । যেখানে নেই কোন গাড়ি, আছে শুধু একটি মাত্র স্কুল । দ্বীপে দুইটা পাড়া আছে একটি পূর্ব পাড়া ও পশ্চিম পাড়া । এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যেতে ১ ঘন্টা ১০ মিনিট হাঁটতে হয় । আর আছে শূটকি মহল্লা । এখানকার শূটকি খুবই বিখ্যাত ।  যা শুকানো হয় সম্পূর্ণ রোদে আর কোন লবণ ছাড়া । এখানে আপনি এক সাথে সমুদ্র ও ম্যানগ্রোভ বন দুটো জিনিসই উপভোগ করতে পারবেন । সকাল ৯/১০ টার দিকে যখন বিচে হাটবেন তখন দেখা মিলবে হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার । আপনি কাছে গেলেই পালাবে । আরও দেখা যাবে শামুক-ঝিনুকের লম্বা সারি । চাইলে সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারবেন । দ্বীপে আরও দেখা মিলবে লবণ চাষ, চিংডির ঘের, তরমুজের ক্ষেত ও ঝাউ বনের মাঝে মহিষের পালের । আছে ৩টি মসজিদ ও ২ টি কচ্ছপ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র । হাজারও প্রতিকুলতার মাঝে দ্বীপের ৩ হাজারের মত লোকের বসবাস ।

মহেশখালী
মহেশখালী
রাতে বিচে তাবু খাটিয়ে ফায়ার ক্যাম্প করতে পারবেন।। আড্ডা, গান, ঝাল-মুড়ি খেয়ে কেটে যাবে সময়।। মাঝে মাঝে শুনতে পারবেন শিয়ালের ডাক।। ভাগ্য ভাল থাকলে দেখা ও পেয়ে যেতে পারেন।। আমি মাঝ রাতে ৪ টার দিকে তাবু থেকে বের হয়েছিলাম তখন ২০ হাত দূরে শিয়ালের দেখা পাই।।
রাতে তাবুতে শুয়ে সাগরের গর্জন শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পরবেন টের ও পাবেন না।।।
কথা দিলাম, দিনশেষে আপনি এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন।।

মহেশখালী

চাইলে একই সাথে মহেশখালী ও কভার দিতে পারেন।।।
#আদিনাথ_মন্দীর #রাখাইন_মন্দীর #স্বর্ণ_মন্দির ।।
আমাদের ভ্রমণ রুট:
দুটি রুট দিয়ে সোনাদিয়া য়াওয়া যায়।
১.একটি কক্সবাজারের ৬নং ঘাট দিয়ে।।
২.অন্যটি চকরিয়া টু মহেশখালী হয়ে।।
আমারা ২ রুট ব্যবহার করেছি।।
মহেশখালী

চট্টগ্রাম টু চকরিয়া - চকরিয়া টু বদরখালী (CNG)- বদরখালী টু মহেশখালীর গোরকঘাটা (CNG)- গোরকগাটা টু সোনাদিয়া পূর্বপাড়া ( স্প্রীড বোট)- সোনাদিয়ার পশ্চিমপাড়া টু শুটকি মহল্লা (স্প্রীড বোট)- শুটকি মহল্লা টু মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরের জেটি (স্প্রিড বোট) - আদিনাথ মন্দির টু রাখাইন মন্দির (CNG)- রাখাইন মন্দির টু বদরখালী( CNG) - বদরখালী টু চট্টগ্রাম (বাস, বাসের সিট গুলো ছোট)।।। চাইলে চকরিয়া হয়েও আসতে পারবেন।।।
#মহেশখালীর গোরকঘাটা ছাড়া আরও একটা রুট আছে সোনাদিয়া যাওয়ার।। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করতে হবে।। গোরকঘাটায় নেমে আপনাকে ঘটি ভাঙ্গা যাইতে হবে ওখান থেকে বোটে করে সোনাদিয়ার পশ্চিম পাড়ায় নামতে পারবেন।। এটা পরিহার করায় ভাল।।
ভ্রমনের বর্ণনা:
সকাল ৬.১৫ এ চট্টগ্রাম হতে বাসে উঠি।।। ৯ টার মধ্যে চকরিয়া পৌঁছে যায়।। ওখানে নেমে নাস্তা সেরে ফেলি।। নাস্তা শেষ করে বদরখালী গামী CNG তে উঠে পড়ি।। চকরিয়ার থানা রাস্তা মাথা থেকে বদরখালীর CNG ছাড়ে।। যেতে ৩০ মিনিট সময়লাগে।। বদরখালী তে আপনাকে CNG যেখানে নামাই দিবে তার একটু সামনেই মহেশখালী গামী CNG দেখতে পাবেন।। CNG কে বলবেন গোরকঘাটা বাজারে নামাই দিতে।। মানুষ বেশি হলে জিপ নিতে পারবেন।। আমরা ১০ জন ছিলাম ২টা CNG নিসি।। গোরকঘাটা যেতে ১ ঘন্টা লাগল।। বাজারে নেমে লাঞ্চ করে নিলাম।।। বাজারে #নিশন নামে হোটেল আছে খাওয়া মান সম্মত দাম ও কম।।। খাওয়া শেষ করে বাজারে গেলাম।। ১০ জনের জন্য ২ বেলার বাজার করে নিলাম।। অবশ্যই দরদাম করে নিবেন।। জিনিস প্রতি ৫/১০ টাকা বাড়তি বলে।।। বাজার শেষ করে জেঠির দিকে হাটা দিলাম।। রাস্তায় টম টম - রিক্সা ডাকাডাকি করবে, এগুলো নিয়ার কোন দরকার নাই।। ১০/১২ মিনিট হাটলে জেঠিতে পৌঁছে যাবেন।।

মহেশখালী

তাছাড়া জেঠিতে যাওয়ার রাস্তায় হাতের ডান পাশে #স্বর্ণ_মন্দির পরে ওটা দেখে নিলাম।।
জেঠিতে গিয়ে স্প্রীড বোট ভাড়া করলাম ( প্রথমে আমাদের পূর্ব পাড়ায় নামই দিয়ে চলে আসবে, পর দিন আবার পশ্চিম পাড়া থেকে আমাদের নিয়ে শুটকি মহল্লায় আসবে ওখান থেকে আবার মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরের জেঠি তে নামায় দিবে)।। এখানে ও দরদাম করবেন।। ৫০ মিনিটের মধ্যে পূর্ব পাড়া গিয়ে নামলাম।। টাকা অর্ধেক দিয়ে স্প্রীড বোট বিদায় করে দিলাম।। পরদিন সকাল ১০ টার দিকে পশ্চিম পাড়া বীচে থাকতে বললাম।।। পূর্ব পাড়া ঘুরে পশ্চিম পাড়ার দিকে রওনা হলাম।।। একজন স্থানীয় লোকের সাথে কথা বলে বলে রাখসিলাম ওনি রিসিভ করল।।। পূর্ব পাড়া থেকে পশ্চিম পাড়া যেতে ১ ঘন্টা হাঁটতে হয়।। পথে তরমুজ ক্ষেত, লাবনের মাঠ ও মহিষের পাল দেখতে পেলাম।। ১ ঘন্টা হেটে ওনার বাসায় ওঠলাম।। বাজার গুলো ওনাকে দিলাম।। বললাম রাতে এমনি মুরগী রান্না খাব।। আর সকালে খিচুড়ী খাব।। ওনি ভাবীকে তা বলে দিলেন।। রাতের খাবার রান্না হতে লাগল আর আমরা ফ্রেশ হয়ে নিলাম।।। বাসার পাশেই দোকান ছিল গিয়ে চা-নাস্তা করে আসলাম।।। রাত ৮.৩০ এর মধ্যেই খাওয়া রেডি হয়ে গেল।।। খাওয়া শেষ করে তাবু নিয়ে বীচের দিকে রওনা হলাম।। রাতে ঝাল-মুড়ির জন্য চানাচুর-মুড়ি নিয়ে ছিলাম, ভাই কে বলে রাখসিলাম একটা বড় থাল ও বাটি নিতে, সাথে পিঁয়াজ, মরিচ, টমেটো নিয়ে গেসিলাম ভাবী তা কেটে রাখসিল।। বীচে গিয়ে তাবু রেডি করলাম।।

মহেশখালী


ফায়ার ক্যাম্প করে আড্ডা দিতে লাগলাম।।। ১১ টার দিকে ঝাল-মুড়ি খেলাম।।। ১.৩০ এরদিকে শুতে গেলাম।।। ভোর ৫.৩০ এ এলার্ম দিয়ে রাখলাম যাতে সূর্যদয় দেখতে পারি।। সকালে উঠে আশে-পাশে ঘুরে দেখলাম।। আর ঝিনুক কুড়ালাম।। ৮ টার মধ্যে খাওয়া রেডি হয়ে গেল।। ভাইয়ের বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া শুরু করলাম।। ওনার ঘরের মধ্যেই টিউবওয়েল ছিল।। বাথরুম ও টাইলসের ছিল।। ৯ টার মধ্যে সব গুছিয়ে নিলাম।। খাওয়া শেষ করে আবার বীচে গেলাম।। গিয়ে দেখি হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার ঝাক।। তাদের পিছু পিছু দৌঁড়াতে লাগলাম।। ১০ টায় বোট আসলে ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, শূটকি মহল্লার দিকে রওনা হলাম।। ২৫ মিনিটে পৌছে গেলাম।। একটু ঘুরে যে য়ার মত শুটকি নিলাম।। পাশে দোকানে চা খেলাম।। ৪০ মিনিট মত সেখানে ছিলাম।। ওখান থেকে আদিনাথ জেটির দিকে রওনা হলাম।। 10 মিনিটে পৌঁছে গেলাম।। জেঠিতে নেমে ছবি তুলে হাটা দিলাম আদিনাথ মন্দিরের দিকে।। জেঠির শুরুতেই মন্দির।। এখানেও টমটম বলবে সব ঘুরাই দেখানোর কথা।। বললাম লাগবে না।।। গতকাল যে CNG করে আসছিলাম ওই গুলার নাম্বার নিয়ে রাখসিলাম, শুটকি মহল্লা থাকতে কল দিয়ে রাখসিলাম।। আমরা মন্দির ঘুরে শেষ করার আগেই CNG এসে গেল।। মন্দিরের নিচে ডাব পাওয়া য়ায় খুব মিষ্টি।। ওখান থেকে CNG নিয়ে রাখাইন মন্দির।।। এটাই সব চাইতে সুন্দর মন্দির।। ঘুরা শেষ করে CNG নিয়ে বদরখালী চলে আসলাম।।। বদরখালী দুপুরে লাঞ্চ করে নিলাম।। তারপর চট্টগ্রামের গাড়িতে ওঠে গেলাম।।।
খরচ জনপ্রতি:
★ চট্টগ্রাম টু চকরিয়া = ১৮০
★ নাস্তা ৮০০/১০= ৮০
★ চকরিয়া টু বদরখালী (CNG) = ৪০
★ বদরখালী টু মহেশখালী, গোরকঘাটা( CNG ২টি ১ টা ৪০০ করে) ৮০০/১০ = ৮০
★ দুপুরেরর খাওয়া ১০০০/১০= ১০০
★ ২ বেলার বাজার ১২০০/১০ = ১২০
★ স্প্রীড বোট ( পূর্ব পাড়ায় নামাই দিয়া + পরের নিয়ে আসা সব মিলে) ৫০০০/১০ = ৫০০
★ সোনাদিয়ায় চা-নাস্তা ৪০০/১০= ৪০
★ সোনাদিয়ায় যিনি সব সময় পাশে ছিলেন+ রান্না করে দিসে ১৫০০/১০ = ১৫০
★ আদিনাথ থেকে CNG করে রাখাইন মন্দির হয়ে বদরখালী ( ২ CNG ১ টা ৫০০ করে) ১০০০/১০= ১০০
★ আদিনাথে ডাব ৩০০/১০ = ৩০
★ বদরখালী তে লাঞ্চ ৮০০/১০= ৮০
★বদরখালী টু চট্টগ্রাম = ২২০
মোট খরচ জনপ্রতি ১৭২০/- টাকা।।
#সর্তকতা
সব সময় চোখ-কান খোলা রাখবেন।। আমরা নামাজ পরতে গেছিলাম এশারের।। এক বন্ধু সামনে মোবাইল রেখে নামাজ পরতেছিল।। সিজদা থেকে উঠে দেখে মোবাইল নাই।।
#NB:
★ GP এর নেট সোনাদিয়ায় একটু ডিস্টার্ব করে।। ROBI ও AIRTEL পাবেন।।
আমরা TENT নিয়ে গিয়েছিলাম তবে সোনাদিয়াতেও পাওয়া যায়।।। আমাদের সাথে যে ভাইয়া ছিল ওনার কাছে ও ১০ টা ছিল।।
Previous
Next Post »

Popular Posts