ম ন পু রা র ঢা ল চ র , যাবেন নাকি?

ঢালচর কোথায় সেটা একটু বলি..
মনপুরার ১নং ইউনিয়নে পড়েছে জায়গাটা। মনপুরা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। রামনেওয়াজ নৌঘাট থেকে সিট্রাকে চড়ে সেখানে যেতে হয়। ঘন্টাখানেকের মতো লাগে যেতে। একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই চরে পঞ্চাশটার মতো পরিবার থাকে। চরবাসি সকলেই দারিদ্র্য সীমার বাইরে জীবনযাপন করে।
ম ন পু রা র ঢা ল চ র
ম ন পু রা র ঢা ল চ র
অাসল কথায় অাসি,
অামি সম্পূর্ণ একা ঢাকা থেকে লঞ্চে মনপুরায় নামি। কংক্রিটের দূষিত জীবনযাত্রা অামার কাছে অসহ্য হয়ে পড়েছিলো। একটু গ্রামীন পরিবেশের জন্য মনটা কেমন ছটফট করতেছিলো, তা বলার মতো না। অামার কয়েকজন প্রিয়বন্ধু সফরসঙ্গী হওয়ার কথা থাকলেও তারা অাগমুহূর্তে বলে দেয়, যাবে না। অামি অামার সিদ্ধান্তে অটল থেকে একাই বেড়িয়ে পড়ি, মনপুরার উদ্দেশ্যে।
মনপুরা ঘুরাকালীন জানতে পারলাম, পাশেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অাধার "ঢালচর"। অামি সময় না নিয়ে ওই দিনই চলে গেলাম চরে। যে বৃদ্ধের অাশ্রয়ে ঢালচরে অাসলাম, তার নাম অাব্দুর রব হাওলাদার। নদীর কোণঘেঁষা তার ছোট্ট টিনের ঘরটাতে তিনি অতিথিরূপ জায়গা দিলেন।
হাওলাদার চাচার দুই নাতী ও এক ছেলের সাথে অামার বেজায় খাতির হয়ে গেলো। দীর্ঘসময় অামরা গল্প করলাম। বলে রাখি, তখন দুপুর ৩টার কাছাকাছি। এরপর কাছেই অারেকটা ঘর থেকে অামার জন্য কাঁচের প্লেট অানা হলো। এবং সেই অাধোয়া প্লেটেই হাওলাদার চাচা ভাত বেড়ে দিলেন। অালুর ছালুন দিয়ে মোটা লালচালের কয়েকপ্লেট ভাত অামি তৃপ্তিভরে খেলাম। কারণ, অনেক্ষণ ধরে পেটে কিছুই যায় নি।
ম ন পু রা র ঢা ল চ র
ম ন পু রা র ঢা ল চ র
খাবার শেষে হ্যামক অার ট্রাইপড নিয়ে, হাওলাদার চাচার ছোট ছেলের সাথে চর দেখতে বেরোলাম। বলাইবাহুল্য, এই চরের ম্যানগ্রোভবন অতি ভয়ানক। অসংখ্য হরিণ সেখানে অাছে। দেখাও যায় সচরাচর।
পথেই দেখা হয়ে গেলো, কোমড়ে পিস্তলগোঁজা দারোগা সাহেবের সাথে। তিনি পথ অাটকালেন। জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন। অামাকে তার সন্দেহজনক মনে হলো। অামি তাকে স্টুডেন্ট অাইডিসহ যাবতীয় কাগজপত্র দিলাম। তিনি নকল বলে ফেলে রাখলেন।
মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছি, সেটা শুনে তার সন্দেহ অারও বেড়ে গেলো। পাশের একজনের দিকে তাকিয়ে দারোগা বল্লেন, "এও মাদ্রাসার ছাত্র। সবদিক দিয়াই মিল অাছে"।
এরই মধ্যে উপস্থিত চরবাসি জড়ো হয়েছে। তাদের সবার কাছেই অামি ভীনদেশী, অপরিচিত। লোকজন কানাকানি করতেছে। চ্যাংড়া কিছু পোলাপান নেগেটিভ কথা বলে দারোগাকে উশকিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাইতেছে। দারোগা সাহেব অমানুষের মতো অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতেছেন অামাকে। অামার অাইডিটিতে সম্মানিজনরা না থাকলে অামি গালিগুলি উল্লেখ করতাম।
ম ন পু রা র ঢা ল চ র
ম ন পু রা র ঢা ল চ র

নানাভাবে বুঝাচ্ছি, অামি শুধু ঘুরতেই এখানে এসেছি। তারা কেউই বিশ্বাস করলো না। অামি বলেছি, হাওলাদার চাচার বাড়িতে তার অাশ্রয়েই তিনি অামাকে উঠিয়েছেন। তাও কেউ বিশ্বাস করলো না।
হাওলাদার চাচাকে সবার সামনে অানা হলো। তিনি অাবুলবিড়ি টানতে টানতে অাসলেন। দারোগা সাহেব স্বল্পমূল্যের মোবাইলের ক্যামেরা চালু করে একবার অামার দিকে অারেকবার হাওলাদার চাচার সামনে ধরে জিজ্ঞেস করলেন, "চাচা অাপনি ওকে চিনেন?" চাচা সমস্ত সত্যকে উপেক্ষা করে ছাফ জানিয়ে দিলেন, "চিনি না, ওই পোলা এই চরে অাইসা অামারে কয় কাগু দুগ্গা বাত দিবেন? হেরপর অামি হেরে দুগ্গা বাত দিছি। অার কিছু কৈতাম ফারি না"
অামার কাছে মনে হলো, প্রত্যন্ত এই চরে কোনো মানুষের বসবাস নাই। পুরা চরই অমানুষ দিয়ে ভরা।
পরোক্ষণেই অামি পরিচয়শূন্য অাশ্রয়হীন একজন মানুষে পরিণত হলাম। সবাই অবিশ্বাস করে বলে ফেল্লো, "জঙ্গি টঙ্গি কিছু একটা হৈবো সার! ধৈরা কোটে চালান কৈরা দেন সার!"
ইতিমধ্যে অামার বাসার অবস্থা খুবই খারাপ। অামি ফাঁকে ফাঁকে অামার বড় ভাইকে সবকিছু জানিয়েছি। অামার বাবা অস্থির হয়ে পড়েছেন। মা প্রচণ্ড অাবেগপ্রবন। তিনি যে কী পরিমাণ ভেঙে পড়েছেন, তা অামি এই দূরের নির্জন চরে বসেই বুঝতে পারছিলাম। অামার বোনটাও দূরে বসে অামার খবরে কষ্ট পাচ্ছিলো।
পুলিশরা অামাকে ধরে পুলিশফাড়িতে নিয়ে গেলো। সেখানে অামার সমস্ত ব্যগ তন্নতন্ন করে দেখা হলো। প্রথমে যা বল্লাম, তা ছাড়া ব্যগের মধ্যে কিছুই পাওয়া গেলো না। কিন্তু এগুলিই তাদের সন্দেহের প্রধান কারণ। অামার কাছে কেন তাবু থাকবে? কেন গাছে ঝোলার জন্য হ্যামোক থাকবে? তাদের কথা হলো, এগুলি তো জঙ্গিদের কাছে থাকবে।
ঢালচরে জঙ্গি সন্দেহে একজনকে অাটক করা হয়েছে সেই মর্মে মনপুরা থানার ওসির কাছে খবর পাঠানো হয়েছে।
অনেক তদবির তালাফির পর শেষপর্যায়ে ১০,০০০ টাকার অর্থমূল্যের (ঘুসে) বিনিময়ে সেখান থেকে অামাকে কড়া নজরদারিতে ছাড়া হয়। অামি কোনোরকম ঘাটে এসে নৌকায় উঠে বসলাম।
সর্বোপরি, সেখানকার মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে অামি অাজন্ম কৃতজ্ঞ থাকবো। ঢালচরের এই একটা মানুষ অামাকে চির ঋণী করে রাখলেন। অাল্লাহ তাকে হায়াতে তায়্যিবা দান করুক।
চরবাসি! তোমাদের এই অাচরণ কোনোদিন ভুলবো না।
সবশেষে বলবো, যত যাইহোক প্রকৃতি অামাদের বন্ধু। যেখানেই যাই প্রকৃতি এবং পরিবেশ সুন্দর রাখবো। অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা করবো না।
Previous
Next Post »

Popular Posts