সিলেটের ভোলাগঞ্জ ঘুরতে যাবেন যেভাবে

সব বন্ধুদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবং অনেক দোনামনা এবং বিভিন্ন সুন্দর জায়গাকে ট্র‍্যাশ বাক্সে ছুড়ে ফেলে আবারো মনস্থির করে নিলাম সিলেটেই যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ। প্রতিবার সিলেটে গেলে দেখা যায় অলস সময় পাড় করি কিন্তু এই দফায় তা করার ইচ্ছা ছিলো না। তাই টার্গেট ছিলো এবার ভোলাগঞ্জ যাওয়ার।

বিস্তারিতঃ
হোটেলের রিসিপশন থেকে একটু তথ্য নিয়ে নিলাম যে কীভাবে কোথা থেকে কোথায় গেলে সুবিধা হবে। Facebook group থেকেও অনেক তথ্য পেয়ে গিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী আমরা ১২:৩০ এর দিকে বন্দর বাজার থেকে লোকাল CNG তে উঠে পড়ি আম্বরখানার উদ্দেশ্যে। বন্দরে গেলেই দেখবেন CNG ডাকাডাকি করছে “আম্বর, আম্বর” করে। বন্দর থেকে আম্বরখানা পর্যন্ত CNG ভাড়া নেবে ১০ টাকা (লোকাল) চাইলে রিজার্ভ ও যেতে পারেন সেক্ষেত্রে ভাড়া একটু বেশি গুনতে হবে।
beautiful-place-volagong-at-syhlet


আম্বরখানা চৌরাস্তার ওখানে আপনাকে নামিয়ে দিবে। সেখানে রাস্তাটা ক্রস করে সোজা কিছুদুর হাটলেই (আম্বরখানা জামে মসজিদ ছাড়িয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দিকে হেটে যেতে হবে) দোতলা লাল রঙ এর BRTC বাস দাঁড়িয়ে আছে পাশেই কাউন্টার।

আম্বরখানা থেকে একেবারে ভোলাগঞ্জ, জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত বাস ভাড়া নিবে ৬০ টাকা। এক ঘন্টা পরপর বাস ছাড়ে। আমরা ১:৩০ টার বাসে উঠেছিলাম। কিন্তু যাত্রী নিতে নিতে ১:৫০ এর দিকে গাড়ি ছাড়ে। চেষ্টা করবেন দোতলার একেবারে সামনের সীটে (যদি খালি থাকে) বসার তাহলে যাত্রাটা বেশ উপভোগ্য হবে। এয়ারপোর্ট এর পাশ দিয়ে রানওয়ে দেখতে দেখতে এবং দুই পাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে ভোলাগঞ্জ জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত পৌছাতে সময় লেগেছিলো আমাদের ১ ঘন্টা ১০ থেকে ২০ মিনিটের মতন। রাস্তার কন্ডিশন খুবই ভালো। নতুন ঢালাই করা রাস্তা। মাঝে একটু আধটু ভাঙ্গা পাবেন কিন্তু অসহনীয় না।

beautiful-place-volagong-at-syhlet


জিরো পয়েন্টের ঠিক আগেই আপনি যদি দোতলা বাসের সামনের সীটে থাকেন তাহলে দেখতে পাবেন অবাক করা বিশাল পাহাড় যা মেঘালয়ে অবস্থিত যা হঠাৎ করেই চোখের সামনে এসে পড়ে এবং লিটেরালি আপনাকে ঐ দৃশ্য হা করে থাকতে বাধ্য করবে। জিরো পয়েন্টে নেমে চলে যাবেন ঘাটে। ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে নিবেন যা ফিক্সড ভাড়া ৮০০ টাকা। নৌকায় আমাদের কোন সময়সীমা বেধে দেয় নাই। নামার সময় মাঝির নাম্বার নিয়ে নিয়েছিলাম। মাঝি বলে দিয়েছিলো যে ”আপনারা ফেরত যাওয়ার একটু আগে আমাকে ফোন দিয়েন“। সুতরাং নৌকা রিজার্ভ নিয়ে যাওয়ার পরে আপনি হাতে সময় নিয়ে ইচ্ছামতন ঘুরতে পারবেন বলে আমার ধারনা। যেহেতু আমরাও পেরেছি। 
beautiful-place-volagong-at-syhlet

বড় ছোট নৌকা আছে। তবে সর্বনিম্ন ৮ জন বসা যায়। কিছু নৌকা দেখলাম যেগুলোতে ১০++ লোক ধারন করতে পারবে। জায়গার বর্ণনা আসলে কি দিবো! এত্ত সুন্দর যা ভাষায় প্রকাশ করার মতন না। পানি প্রচন্ড পরিষ্কার। ঝকঝকে একদম। পাথরগুলোও খুব সুন্দর। আকাশের নীল রঙ পানিতেও বেশ ভালোই রিফ্লেকশন ফেলে যেকারনে পানি নীলচেই লাগে। গোসল করা যায়। একপাশে বেশ মানুষজন গোসল করে দেখেছি। টলটলে পরিষ্কার পানি, পাশেই বিশালাকার মেঘালয়ের পাহাড় এবং পানির নীচে হরেক রকমের পাথর সে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।


সাদা পাথর থেকে রওনা দেয়ার ১০ মিনিট আগে আমরা মাঝিকে কল দেই। মাঝি ঘাটে চলে আসে এবং আমরা রওনা দেই জিরোপয়েন্টের দিকে। ট্রলার ভ্রমনের সময়টা খুবই অল্প। ১৫ মিনিট লাগে সাদাপাথর থেকে জিরো পয়েন্ট আসতে। সেখান থেকে সেই একই ভাবে বাসে উঠে আবার আম্বরখানা। জিরো পয়েন্ট থেকে BRTC এর লাস্ট ট্রিপ ছাড়ে ৫:৩০ টা বাজে। এরপরে আর BRTC এর বাস নেই। চাইলে একদিনেই ঢাকা থেকে যেয়ে এই ট্রিপ সম্পন্ন করা সম্ভব এবং খুব কম খরচেই। 

পরিবহন খরচ :

ঢাকা থেকে সিলেট ৪৭০/- (নন-এসি)
সিলেট বন্দর বাজার থেকে আম্বরখানা CNG ১০/- (লোকাল)
আম্বরখানা থেকে জিরো পয়েন্ট বাস ৬০/- (BRTC)
জিরোপয়েন্ট থেকে সাদাপাথর ৮০০/- (রিজার্ভ ট্রলার)

ওখানে জিরো পয়েন্টে রেস্টুর‍্যান্ট আছে যেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে দুপুরে। এছাড়া অনেক দোকানপাট আছে টং দোকানের মতন। বিজিবির ওয়াশরুম ও আছে বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
beautiful-place-volagong-at-syhlet

বিঃদ্রঃ BRTC এর বাস লোকাল না। ওরা পুরো সিটিং সার্ভিস। সীট ফুল হয়ে গেলে কোথাও আর দাঁড়ায় না।
এখন একটি কথা, সুন্দর এই জায়গা গুলো আমাদেরই সম্পত্তি। আমাদের দেশের সম্পত্তি। তাহলে কেন এই জায়গাগুলো নোংরা করে? কেন যেখানে সেখানে চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের পানির বোতল ফেলে আসে? এই জায়গাগুলো নোংরা করে কি মজা পায় এই অমানুষগুলা? একটা অনুরোধ ঘুরতে যেয়ে জায়গাগুলো নোংরা করবেন না। যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলে আসবেন না। এই জায়গাগুলো আমাদের সম্পদ। (সংগ্রহ )
Previous
Next Post »

Popular Posts